রাণী বিলকিস ও সুলাইমান আঃ এবং জ্বীনদের নিয়ে কুরানে বর্ণিত ঘটনা।
রাণী বিলকিস ও সুলাইমান আঃ এবং জ্বীনদের নিয়ে কুরানে বর্ণিত ঘটনা জানবো, নবী হযরত দাউদ আঃ এর পুত্র হযরত সুলাইমান আঃ, আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন সুলাইমান আঃ নবুয়ত দান করেছিলেন, আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন সুলাইমান আঃ কে এমন কিছু মোজেজা দান করেছিলেন যা অন্য নবীদের দান করেননি।
অনেক নাজ নেয়ামত সুলাইমান আঃ আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন দিয়ে ছিলেন, জ্বীনদেরকে আল্লাহপাক রব্বুল আলামীন সুলাইমান আঃ অধীনে করে দিয়েছিলেন, হযরত সুলাইমান আঃ কিভাবে জ্বীনদেরকে পরিচালনা করতেন এবং তাদেরকে দিয়ে কাজ করাতেন আজকে আমি আপনাদেরকে সবকিছু জানাবো, আপনি যদি সুলাইমান আঃ ঘটনা জানতে চান তাহলে সম্পূর্ন লেখা গুলো পড়ুন।
![]() |
রাণী বিলকিস ও সুলাইমান আঃ এবং জ্বীনদের নিয়ে কুরানে বর্ণিত ঘটনা |
বন্ধুরা আপনাদের জন্য একটি কথা বলব, নামাজ বাদ দিওনা বন্ধু এপারে চেয়েও ওপারের জীবন অনেক সুন্দর।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি দাউদের জন্য সুলাইমানকে দান করেছিলাম, সে কতই না উত্তম বান্ধা, অবশ্যই সে ছিল আমার প্রতি সদা প্রত্যাবর্তনমীল ), “সুরা ছদ” আয়াত- ৩০ ;
আধুনিক ইতিহাস বিদদের মতে, বর্তমান ইয়েমেনই হচ্ছে দক্ষিন আরবের রাজ্য সাবা, কোনো কোনো ইতিহাসবিদ মনে করেন সাবা নামক
রাজ্যটি আসলে পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়া, রাজ্যেটির সঠিক সীমা
নিয়ে বিতর্ক আছে বহুকাল ধরে, ইথিওপিয়াই ছিল সাবা, এর পক্ষে যুক্তিদান কারীরা বলেন, সাবার রানীর রাজত্ব ছিল অ্যাকজাম নামক রাজ্যের উপর। কিন্তু
রাজা সুলাইমানের সময়ে এমন কোনো রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না, এমনকি যখন “বুক অভ কিংস ” সম্পাদিত হয় তখনও এমন কোনো রাজ্য ছিল
বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। আরবরা শেবার রানীকে বিলকিস আর ইথিওপিয়ানরা মাকেদা বলে
সম্বোধন করে থাকে।
![]() |
রাণী বিলকিসের কাহিনী হুদহুদ পাখি |
হুদহুদ পাখি আল্লাহর হুকুমে পক্ষীকুলের আনুগত্য লাভ করে, হযরত সুলাইমান আঃ একদিন তিনি পক্ষীকুলের সকল পক্ষীকে নিয়ে দরবার করেন, এবং সকলের খোঁজ খবর নেন, তখন তিনি দেখলেন সেখানে হুদহুদ পাখিটি নেই, তিনি অনতিবিলম্বে তাকে ধরে আনার জন্য কড়া নির্দেশ জারি করলেন। সাথে তার অনুপস্থিতির উপযুক্ত কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করলেন।
হুদহুদ পাখি ছোট্ট পাখির নাম, যা পক্ষীকুলের মধ্যে অতীব ক্ষুদ্র ও দুর্বল এবং যার সংখ্যা দুনিয়াতে খুবই কম।
এর একটু পরেই হুদহুদ ফিরে এলো হযরত সুলাইমান আঃ দরবারে, আর এসে বলল আমি এমন কিছু তথ্য পেয়েছি যা আপনার কাছে নেই, সাবা থেকে আমি নিশ্চিত খবর নিয়ে এসেছি, সেখানে দেখলাম এক নারী রাজত্ব করছেন এবং তাঁকে সবকিছু দেওয়া হয়েছে, তার একটি বিরাট সিংহাসন রয়েছে, হুদহুদ আরও বলল এখানেই শেষ নয়, আর দেখলাম তিনি ও তাঁর প্রজারা, আল্লাহকে বাদ দিয়ে সূর্যকে সেজদাহ করছে, শয়তানী কাজ গুলোকে তারা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছে এবং শয়তান আল্লাহর পথ থেকে তাদের বিরত রেখেছে।
সোলাইমান আঃ এমন তথ্য শুণে অবাক হলেন, হুদহুদের মাধ্যমে একথা বলানোর মধ্য দিয়ে আল্লাহ আমাদেরকে একথা জানিয়ে দিলেন যে, নবীগণ গায়েবের খবর রাখেন না, তারা কেবল অতটুকুই জানেন, যতটুকু আল্লাহ তাদেরকে জানিয়ে থাকেন।
সুলাইমান আঃ রানি বিলকিসকে আল্লাহর বিধানের কাছে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে একটি চিঠি লিখলেন এবং হুদহুদকে বললেন আমার এই চিঠি নিয়ে তাদের দাও, এরপর তাদের কাছ থেকে একটু দূরে সরে দ্যাখো তাদের প্রতিক্রিয়া কী, এরপর হুদহুদ চিঠি নিয়ে রানি বিলকিসের কাছে চলে গেল।
হুদহুদ রানি বিলকিসের কাছে চিঠি পৌচে দিল, চিঠি পেয়ে রানি বিলকিস মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকলেন এবং এটির ভাষ্য তাদের সামনে তুলে ধরলেন, তিনি বললেন, সভাসদগণ এই দেখেন আমাকে সুলাইমান এর পক্ষ থেকে মোহরাঙ্কিত পত্র দেওয়া হয়েছে, তাতে লেখা আছে অসিম দাতা অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি, আমার প্রতি উদ্যত হইয় না, অনুগত হয়ে আমার কাছে হাজির হও, রানী বিলকিস মন্ত্রীদের কাছে পরামর্শ চেয়ে বললেন, হে সভাসদগণ আমার কর্তব্য সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দিন। আপনাদের ছাড়া আমি কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেইনি।
![]() |
সুলাইমান আঃ ও রাণী বিলকিস এবং জ্বীনদের নিয়ে কুরানে বর্ণিত ঘটনা |
এরপর তাঁর মন্ত্রীরা বললেন, আমাদের শক্তি আছে এবং আমরা
কঠোর যোদ্ধাও, তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আপনারই, কাজেই
আপনি কি আদেশ করবেন ভেবে দেখুন, বিলকিস হামলার আশঙ্কা
প্রকাশ করে বললেন, রাজারা যখন জনপদে ঢোকে, তখন বিপর্যয় ডেকে আনে এবং সেখানকার সম্মানিত ব্যক্তিদের অপমান করে ছাড়ে, এরাও তাই করবে, শান্তিচুক্তি করে আত্মসমর্পণ
করার ফন্দি আঁটেন বিলকিস. সুলাইমান আঃ এর কাছে উপহার
পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন, মন্ত্রীদের বললেন, আমি তার কাছে উপহার পাঠাচ্ছি, দেখি আমার দূতেরা কী
জবাব নিয়ে আসে।
বিলকিসের প্রতিনিধি দল সোলাইমান আঃ এর দরবারে হাজির হলো ইপহার নিয়ে, সোলাইমান আঃ বলেন তোমরা কি আমাকে অর্থ সম্পদ দিয়ে সাহায্য করতে এসেছ? আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন তা তোমাদের চেয়ে উত্তম, তোমরা বরং তোমাদের উপহার নিয়ে আনন্দ করো, কঠিন এক ধমক দিয়ে সুলাইমান আঃ তাঁদের বললেন, নিজ দেশে ফিরে যাও আমি তাদের বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য এক সেনাবাহিনী নিয়ে আসব, তাঁদের অপমানিত করে সেখান থেকে বের করে দিলো, তারা লাঞ্ছিত হয়ে ফিরে গেল।
এবং তারপর হযরত সুলাইমান আঃ অহির মাধ্যমে জানতে পারলেন, হুঁশিয়ারি শুনে বিলকিস খুব তারাতাড়ী তার কাছে আত্মসমর্পণ করবেন, তাই তিনি যখন আসবেন তখন তাকে আল্লাহর দেওয়ার ক্ষমতা দেখানোর জন্য সুলাইমান আঃ পরিকল্পনা করার জন্য সভা ডাকলেন, আর বললেন সভাসদগণ, তারা আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করার আগেই তোমাদের কেউ তার সিংহাসন আমার কাছে নিয়ে আসবে।
তখন এক শক্তি শালী জ্বীন বললেন, আপনি আপনার জায়গা থেকে ওঠার আগেই আমি সিংহাসন আপনার কাছে এনে দেবো, এই কাজে আমি অবশ্যই ক্ষমতার অধিকারী ও আস্থাভাজন, এরপর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইসমে আজম যানা এক ব্যক্তি সুলাইমান আঃ বললেন, আপনার চোখের পলক ফেলার আগেই সিংহাসন আপনার কাছে এনে দেবো, যেই কথা সেই কাজ, মুহূর্তে তিনি রানী বিলকিসের বিরাট সিংহাসন সোলাইমান আঃ এর সামনে হাজির করে দিলেন, এবং আল্লাহর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানালেন।
নিজের সিংহাসন সোলাইমান আঃ দরবারে দেখে বিলকিস অবশ্যই অবাক হবেন এবং আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা দেখে তাকে নবি হিসেবে মেনে নিয়ে আনুগত্য করবেন, তাই তাকে পরীক্ষা করার জন্য সুলাইমান আঃ কিছু নির্দেশনা দিলেন, এবং বললেন তাঁর সিংহাসনের ধরন পাল্টে দাও, এর পর দেখি সে সত্য পথের দিশা পায়, নাকি যাঁরা পথের দিশা পায় না তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়।
এরপর বিলকিস আত্মসমর্পণের জন্যই এলেন, তাঁকে সিংহাসনটি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করা হল, এটি আপনার সিংহাসন? তিনি বললেন আমার তাই তো মনে হয়, আপনার সম্পর্কে আগেই আমাদের জানানো হয়েছে, এবং আমরা আত্মসমর্পণ করতে এসেছি, রানি বিলকিস কে প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানিয়ে সুলাইমান আঃ বললেন, প্রাসাদে প্রবেশ করুন, প্রাসাদের মেঝে দেখে তিনি সেটিকে স্বচ্ছ পানির রদ মনে করলেন।
বিভ্রান্ত হয়ে পায়ের গোছা থেকে কাপড় উঁচু করলেন, তখন সুলাইমান আঃ বললেন, এটি একটি স্বচ্ছ কাচের প্রাসাদ, রাণী বিলকিস এ সব পরীক্ষার মুখে পড়ে সুলাইমান আঃ এর অলৌকিক ক্ষমতা উপলব্ধি করলেন, এবং আল্লাহর দরবারে চূড়ান্ত আত্মসমর্পণের ঘোষণা দিলেন, তিনি বললেন, হে আমার প্রতিপালক আমি অবশ্যই নিজের প্রতি যুলুম করছি, আমি সুলাইমানের সঙ্গে বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করছি।
অনেক ঐতিহাসিকদের মতে রানি বিলকিসের দাদা অথবা নানা একজন জ্বীন জাতীয় মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন, সেই দিক থেকে সাবার রানী বিলকিসের রক্তে জিনেদের রক্ত প্রবাহিত ছিল, সোলাইমান আঃ এবং সাবার রানী বিলকিসকে নিয়ে আরও অনেক ঘটনা কুরআন এবং হাদিসে বর্ণিত আছে।
আপনারা যদি চান তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন তাহলে বন্ধুরা আজ আমরা সোলাইমান আঃ এবং রানী বিলকিস এর ঈমান আনার ঘটনা জানতে পারলাম।
আজ এ পর্যন্ত, সবাই ভালো থাকবেন সুস্হ থাকবেন।
আল্লাহ হাফেজ
ইসলামিক মিডিয়া