আসসালামু আলাইকুম.পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব আমাদের প্রিয় নবী হজরত মহম্মদ সঃ, এর আদর্শ আমাদের জন্য শিক্ষা. ইসলামের সর্বশেষ নবী হযরত মোহাম্মদ সঃ এর জীবন বৃত্তান্ত সংবলিত ১৯৭৬ সালের ইংরেজি ভাষার একটি চলচ্চিত্র নির্মান করা হয়, ছবিটি পরিচালনা করেছেন মোস্তফা আক্কাদ, ছবিতে অভিনয় করেছেন অ্যান্থনি কুইন, আইরিন পাপেস, মাইকেল অ্যানসারা সহ বিভিন্ন দেশের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা অভিনেএরা,
এটি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ একটি সিনেমা, যা বর্তমানে বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন দেশে প্রর্দষিত হচ্ছে, সেই সিনেমাটির নাম মোহাম্মদ দ্যা ম্যাসেঞ্জার অফ গড.
এই মুভিতে হুজুর পাক সঃ এর জন্ম থেকে শুরু করে আরব জাতির বর্বর ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে. পাশাপাশি নবীজীর জন্মের সময় আল্লাহর ঘর ও মুসলিম উম্মার প্রাণকেন্দ্র, পবিত্র কাবা শরীফ কে যখন বাদশা আব্রাহা ধ্বংস করতে এসেছিল, তখন আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় বান্দাদের জন্য তার নিদর্শন হিসেবে কিভাবে শত্রুদের প্রতিহত করে পবিত্র কাবা ঘরকে রক্ষা করেছিলেন।
সে ঘটনাও তুলে ধরা হয়েছে, তবে এই মুভিতে কোথাও নবীজির চেহারা মোবারক দেখানো হয়নি ও ৪ খলিফা আবুবকর, ওমর, ওসমান, এবং আলি রাঃ কারোই চেহারা মোবারক দেখানো হয়নি, তাই কোনো দ্বিধা ছাড়াই আপনারা মুভিটি ও দেখতে পারেন।
আরব সমাজ যখন অন্ধকারে ডুবে ছিল, সময়টা ছিল যখন আমাদের প্রিয় নবী পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় নি সেই সময়টাকে বলা হতো আইয়ামে জাহিলিয়াতের যুগ. অর্থাৎ অজ্ঞতার যুগ. আরব সমাজে সেই সময় আইন কানুন এবং নীতি-নৈতিকতার কোন বালাই ছিল না. বেহায়াপনা এবং অশ্লীলতায় পুরো সমাজ যেন ডুবে ছিল।
সেই সময় নারীদের কোন অধিকার ছিল না, নারীদের উপর করা হতো নানা ধরনের অত্যাচার এবং নির্যাতন, এমনকি অনেক সময় কন্যা সন্তানদেরকে জীবিত কবর দেওয়া হতো, এতে মানুষের মনে বিন্দুমাত্র দ্বিধা কাজ করতো না, নারীদেরকে সেই সময় ভোগের পণ্য মনে করা হতো, এমনকি বাজারে নারী-পুরুষ উভয়কেই দাসদাসী হিসেবে বেচাকেনা করার রীতি ছিল।
সে সময় বিভিন্ন
প্রান্ত থেকে মুসলিমরা মক্কায় কাবা তাওয়াপ করার জন্য আসলেও কাবাঘরের ভিতরে রাখা
ছিল তিনশো ষাটটি মূর্তি. কারণ মক্কায় তখন মুসলিমদের পাশাপাশি খ্রিস্টান ইহুদী সহ
বিভিন্ন গোত্রের মানুষ ব্যবসার জন্য স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বসবাস করত, যাদের মধ্যে কাফের এবং মুশরিকদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় তাদের
দাপটও ছিল অনেক বেশি, তখন সময়টা ছিল পাঁচশত সত্তর খ্রিস্টাব্দের।
হাশিম গুএ ছিল মক্কায সব চেয়ে বড়, হাশিমের পুত্র ছিল আব্দুল মুত্তালিব, মক্কার মাটিতেই আব্দুল মুত্তালিব বড় হয়ে উঠেন তিনি ছিলেন সুঠাম দেহের অধিকারী এবং খুবই শক্তিশালী, একদিন তিনি আসমান থেকে গায়েবী আওয়াজ শুনতে পান, যেখানে বলা হয়েছিল হে আব্দুল মুত্তালিব তুমি জমজম কূপ খনন কর, এবং জমজম কূপটি রয়েছে তখনকার কুরবানী করার স্থানে, আব্দুল মুত্তালিব এই কথা শোনার পর অনেকটা চিন্তিত হয়ে পড়লেন তারপর তিনি সামনে এগোতে থাকলেন এবং তার ছেলে আল হারিসকে সাথে নিয়ে তিনি ওই স্থানটিতে খনন করা শুরু করলেন।
আর যখন আব্দুল মুত্তালিব ওই স্থানে জমজম কূপ খনন করা শুরু করল, তখন মক্কার সমস্ত লোকেরা আব্দুল মুত্তালিবকে বাধাগ্রস্ত করলো, কিন্তু তখনকার সময় কোরাইশ বংশের লোকেরা আব্দুল মুত্তালিব কে সাপোর্ট করতো, মক্কার নেতারা আব্দুল মুত্তালিব কে অনেক চাপ প্রয়োগ করলো এবং জিজ্ঞেস করল, কে তোমাকে এত সাহস দিয়েছে , এখানে খনন করার জন্য?
তখন আব্দুল মুত্তালিব বললেন আমাকে এক অলৌকিক কন্ঠ ইশারা করেছেন, যার কারণে আমি এখানে খনন করছি ,এখান থেকে পানি বের হলে সে পানি দিয়ে আমাদের সবার তৃষ্না মিটবে আর কখনোই এই জমজম কূপের পানি শুকাবে না, কিন্তু মক্কার নেতারা এই কথাকে সাপোর্ট করলেন না তারা আব্দুল মুত্তালিবের সাথে তর্ক করে যাচ্ছেন, এমন সময় আব্দুল মুত্তালিব সেখানে স্বর্ণের দুটি মূর্তি ও সাতটি স্বর্ণের তলোয়ার ও ঢাল পেলেন।
এরকম গুপ্তধন দেখে মক্কার নেতারা বলল আব্দুল মোত্তালিব তুমি আমাদেরকে এগুলি ভাগ দিতে হবে, তখন আব্দুল মুত্তালিব বলল যে জিনিস আমি নিজে পেয়েছি এই জিনিসের ভাগ আমি কেন আপনাদের দিব, তখন মক্কার নেতারা বলল ভাগ তোমাকে দিতে হবে কারণ আমরা তোমার অভিভাবক এবং আমাদের অধিকার আছে, তখন আব্দুল মুত্তালিব বলল পুরো কোরাইশবাসী আমার সাথে আছে, হাশেমের বংশ কে কেউ কিছুই করতে পারবেনা এভাবেই আব্দুল মুত্তালিব মক্কার নেতাদের হুমকি দিলেন।
তারপর আব্দুল মুত্তালিব জমজম কূপ খনন করতে লাগলেন এ সময় মক্কার নেতারা নরম শুরে বলল আবদুল মুত্তালিব আমরা তোমার উপরে ছাড়লাম তুমি আমাদেরকে যা দিবে আমরা তাই নিব তারপর আব্দুল মুত্তালিব কিছুদূর খনন করার পরেই পানির দেখা পেলেন এবং যখন আব্দুল মুত্তালিব পানির দেখা পেল তখন মক্কার নেতারা আব্দুল মুত্তালিব এর কথা বিশ্বাস করতে শুরু করলো।
এবং তাকে সম্মানও করতে শুরু করল, এবং সেইদিন থেকেই মক্কার নেতারা আব্দুল মুত্তালিব কে মক্কার নেতা হিসেবে ঘোষণা করল, এবং আব্দুল মুত্তালিব হয়ে উঠলেন মক্কার অভিভাবক।
কুরাইশ বংশের ও মক্কার প্রধান আব্দুল মুত্তালিব কাবা ঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন আর নবীজি তখন মা আমিনার গর্ভে , এদিকে ইয়েমেনের বাদশা আব্রাহা জানতে পারলেন মক্কার মানুষেরা কাবাকে সিজদা করে, এবং সেই সময় বাদশা আব্রাহা বড় একটি মন্দির তৈরি করেছিলেন।
আব্রাহা চেয়েছিলেন মক্কাশহ গোটা বিশ্বের মানুষ সেই মন্দিরে গিয়ে উপাসনা করবে, এবং সকল মানুষ আব্রাহার কাছে মাথা নত করবে, কিন্তু আব্রাহা যখন জানলেন মক্কায় মানুষেরা হজ করার জন্য আসে এবং কাবাকে সেজদা করে তখন আব্রাহা সিদ্ধান্ত নিলেন যে কাবাকে ধ্বংস করে দিবেন, এবং আব্রাহা কাবাকে ধ্বংস করার জন্য বিশাল এক হস্তী বাহিনী নিয়ে মক্কায় উপস্থিত হলেন।
এবং সেই খবর আব্দুল মুত্তালিবের কানে এসে পৌঁছালো, আব্দুল মুত্তালিব মক্কার সকল নেতাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করলেন এবং তারা বুঝতে পারলেন যে আব্রাহার সাথে তারা যুদ্ধ করে পারবে না, এই পরিস্থিতিতে আব্দুল মুত্তালিব অনেকটাই চিন্তিত হয়ে পড়লেন, আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র আবু তালিব এসে খবর দিলেন, বাবা আব্রাহা বিশাল বড় হস্তী বাহিনী নিয়ে কাবা ধ্বংস করার জন্য এসেছে এবং তার সাথে অনেক শূন্য বাহিনী রয়েছে আমরা কখনোই যুদ্ধ করে তার সাথে পারবো না, তার চাইতে ভাল হয় আমরা তার কাছে আত্মসমর্পণ করি।
এর মধ্যেই আব্রাহা মক্কার প্রধান আব্দুল মুত্তালিব এর কাছে পত্র দিলেন, যে আমরা মক্কার যুদ্ধ করার জন্য আসিনি আমরা এসেছি কাবাকে ধ্বংস করার জন্য তাই আমরা মক্কার কোন মানুষের ক্ষতি করতে চাই না, বাদশা আব্রাহার এ খবর পেয়ে আব্দুল মুত্তালিব অনেকটাই আশ্বস্ত হলেন্
এবং আব্রাহার সাথে দেখা করার জন্য আব্দুল মুত্তালিব মক্কার কয়েকজন নেতা কে নিয়ে তার কাছে যাচ্ছিলেন, পথিমধ্যে এসে তিনি দেখলেন মক্কার সকল গবাদি পশু উটগুলো মাঠে নেই, তখন এক উট পালক আব্দুল মুত্তালিব কে বললেন আমাদের সকল উটকে আব্রাহাম লোকেরা নিয়ে গিয়েছে, তখন আব্দুল মুত্তালিব উট পালককে আশ্বস্ত করলেন যে আমরা বাদশা আব্রাহার কাছে যাচ্ছি।
কিছুদূর যাওয়ার পরই বাদশা আব্রাহার লোকজন আব্দুল মুত্তালিবের খোঁজে আসলো, এবং আব্দুল মুত্তালিব কে জিজ্ঞাসা করল মক্কার প্রধান আব্দুল মুত্তালিব কে আপনি কি চিনেন, তখন আব্দুল মুত্তালিব বলল আমি মক্কার প্রধান, তখন সৈন্য বাহিনী বলল আপনাকে আব্রাহার দরবারে যেতে হবে, এবং আব্দুল মুত্তালিব আব্রাহার দরবারে গেলেন।
বাদশা আব্রাহা অনেকটাই চালাক চতুর মানুষ ছিলেন তিনি প্রথম বললেন যে আব্দুল মুত্তালিব আপনার কথা বলেন তখন আব্দুল মুত্তালিব বলল যে আমি আপনার কাছে এসেছি আপনি আমার সমস্ত উটগুলিকে নিয়ে এসেছেন সেগুলি ফেরত নেওয়ার জন্য, তখন বাদশা আব্রাহা বললেন আমি আপনাকে দেখে অনেকটা পছন্দ করেছি।
কিন্তু আপনি শুধু আমার এখানে উটগুলো ফেরত নেওয়ার জন্য এসেছেন আপনার কাবাকে আমি ধ্বংস করব সে নিয়ে আপনি কোন চিন্তিত নয়, তখন আব্দুল মুত্তালিব উত্তর দিলেন আপনি আমাকে খবর পাঠিয়েছিলেন আপনি এখানে যুদ্ধ করার জন্য আসেননি আপনি কাবার ধ্বংস করার জন্য এসেছেন আমার যত লোকবল জনবল রয়েছে আমরা যুদ্ধে আপনার সাথে পারবো না।
তাই কাবার মালিক কাবাকে রক্ষা করবেন, এর আগে যারাই কাবাকে ধ্বংস করার জন্য এসেছিল তারা নিজেরাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, তখন আব্রাহা বলল আমি কাবাকে ধ্বংস করব এবং আপনার উটগুলি আপনি ফেরত নিয়ে যান, ঊটগুলোকে নিয়ে আব্দুল মুত্তালিব বাদশা আব্রাহার দরবার থেকে মক্কায় ফিরে গেলেন।
তার পর আব্রাহা বিশাল এক হস্তি বাহিনীকে নিয়ে ক্রমশ মক্কার দিকে এগিয়ে আসছে আর মানুষজন তাদের ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছে কারণ সেই হস্তী বাহিনীকে প্রতিহত করার শক্তি তাদের ছিল না, এমনকি ততক্ষণে সেই বাহিনী মক্কার অনেককে ধরে নির্যাতন করতে শুরু করেছে, পরদিন সকালে আব্রাহা তার হাতিবাহিনীদের নিয়ে মক্কায় প্রবেশ করতেই যাচ্ছিল।
কিন্তু হাতিগুলো যখন কাবাঘরের সীমানার মধ্যে চলে আসে তখন তাঁরা আর সামনের দিকে এগোতে চাইছিল না, তাদের পা গুলো যেন একদম পাথর হয়ে গিয়েছে, আবরাহা এবং তাঁর সৈন্যরা তখন একটু চালাকি করে হাতিগুলোর মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়।
এবং হাতিগুলোকে তারা ভালো ভালো খাবার খেতে দেয়. আর সেই সমস্ত খাবার তারা ছড়িয়ে দেয় কাবাঘরের সামনে, হাতিগুলো তখন সেই খাবারের লোভে আবারও কাবাঘরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে, এদিকে আব্দু আব্দুল মোত্তালিফ অনেক চিন্তিত হয়ে পড়েন, ভারাক্রান্ত মন নিয়ে তিনি কাবাঘরের সামনে চলে আসেন, কাবাঘরের দরজায় একটি শিকল ছিল, আব্দুল মোত্তালিফ সেই শিকলটিকে শক্ত করে চেপে ধরে, আর কাবাঘরের দরজার উপর মাথা রাখে।
এরপর সে মহান আল্লাহকে উদ্দেশ্য করে বলে হে আল্লাহ এটা তোমার ঘর, আর তোমার ঘরকে রক্ষা করার দায়িত্ব তোমার। আমরা তো শুধুমাত্র তোমার বান্দা, তোমার গোলাম, আমাদের পক্ষে আর কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না, এখন তুমিই কিছু করো, কথাগুলো বলতে বলতে তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল।
কিন্তু ঠিক তখনই সে আকাশ থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পায়। তাই সে ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে আসে ঠিক তখনই তিনি দেখতে পায় আকাশ থেকে শত শত আবাবিল পাখি ধেয়ে আসছে মক্কার দিকে, আব্দুল মোত্তালিব এক দৃষ্টিতে পাখিগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিল. আর মনে মনে ভাবছিল এটাই হয়তো আল্লাহর কাছ থেকে প্রেরিত কোনো রহমত, যেটা আজ কাবাঘরকে রক্ষা করবে।
তা না হলে এতো আবাবিল পাখি কেন এখানে আসছে? আবার প্রতিটি পাখির সঙ্গেই তিনটি করে পাথর ছিল, একটি পাথর ছিল তাদের মুখে এবং বাকি দুইটি পাথর ছিল তাদের দুই পায়ে. আব্দুল মোত্তালিফ দেখতে পায় সমস্ত আবাবিল পাখি কাবা শরীফ ঘিরে ফেলেছে এমনকি তারা সেখানে কাবা শরীফ তাওয়াফ করছে।
তিনি এবার বুঝে যায় পৃথিবীর কোনো শক্তি আজ কাবা শরীফের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না. এরপর সমস্ত আভাবিল পাখিগুলো ছুটে চলে যায় আব্রাহার সৈন্য এবং হস্তি বাহিনীর দিকে এবং তার সৈন্যরা আবাবিল পাখিদের দেখে অনেক ভয় পেয়ে যায়, তারা তখন সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু ততক্ষণে সমস্ত আবাবিল পাখি তাদের সঙ্গে থাকা পাথরগুলো আব্রহার ও তার সৈন্যদের উপর বৃষ্টির মতো ফেলতে শুরু করে।
ফলে দেখা যায় প্রতিটি পাথর সেই সৈন্যদের শরীর ভেদ করে ঢুকে যাচ্ছে. এতে করে মুহূর্তের মধ্যেই সকল সৈন্যরা মারা যায়।
পাথর বর্ষনে আব্রহা তার উটের উপর থেকে নিছে পড়ে যায়,এবং এ অবস্হায় আব্রহা মারা যায়।
আল্লাহ তায়ালা এই কাফেরদেরকে একদম ধূলিসাৎ করে দেয়. মহান আল্লাহর কুদরতের মাধ্যমেই এই ছোট ছোট পাথর দিয়েই ধ্বংস হয়ে ছিল ষাট হাজার সৈন্য এবং তেরোটি হাতি। এমনকি এই ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে পবিত্র কোরানের সূরা আলফিলে।
যেখানে বলা হয়েছে তুমি কি দেখনি? তোমার প্রতিপালক কাবাঘর ধ্বংস করতে আসা হাতিওয়ালাদের সাথে কিরূপ আচরণ করেছিল তিনি কি তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেননি? তিনি তাদের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন ঝাঁকে ঝাঁকে আবাবিল পাখি. যারা সেই হাতিওয়ালাদের উপর পোড়ামাটির পাথর নিক্ষেপ করেছিল, অতঃপর তিনি সেই হাতিওয়ালাদের পরিণত করেছিলেন প্রকৃত ভুষির ন্যায়।
তো এভাবেই সেদিন কাবাঘর রক্ষা পেয়ে ছিল এই ঘটনার পর প্রায় দুই মাস কেটে যায়. এরপর আমরা একটি রাতের ঘটনা দেখতে পাই, মক্কাবাসীরা সেদিন নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত ছিল, নবীজির দাদা আব্দুল মুত্তালিফ সেদিন রাতে কাবা শরীফের সাথে দাঁড়িয়ে ছিলেন হঠাৎ করেই তিনি আকাশে একটি প্রজ্জ্বলিত আলো দেখতে পায়, যেটা আরব থেকে পূর্বাঞ্চল সহ পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, আলোটিকে দেখে আব্দুল মুত্তালিক অনেক অবাক হয়ে যায়, আর তিনি দৌড়ে নিচে চলে আসেন।
এখানে তিনি দেখেন যে কাবা শরীফের ভেতরে বিভিন্ন পূজারীদের রাখা যে তিনশো ষাটটি মূর্তি ছিল সেগুলো সব মাটির দিকে নত হয়ে ভেঙ্গে পড়ছে. এরপর তিনি কাবাঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখেন যে কুফা এবং সিরিয়ার মধ্যবর্তী স্থানে পানিপ্রবাহ শুরু হয়েছে।
অথচ বহু বছর ধরে এখানে কেউ পানি দেখেনি ঠিক তখনই আব্দুল মুত্তালিবের তার ঘরের দিকে চোখ পড়ে, তিনি এখানে দেখতে পায় আজকে তার ঘরের মধ্য থেকে অদ্ভুত এক ধরনের নুরের আলো বের হচ্ছে, যেটা এর আগে তিনি কখনো কোনোদিন দেখেনি, আব্দুল মুত্তালিক তখন ধীরে ধীরে তার ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে কিন্তু যখন তিনি তার ঘরের দরজার কাছে পৌঁছায় তখন তিনি দেখেন যে মা আমিনার কল জুড়ে একটি ফুটফুটে শিশুর জন্ম হয়েছে, যার শরীর থেকে অসম্ভব পরিমাণে নূর বের হচ্ছে।
আব্দুল মুত্তালিবের চোখে তা দেখে পানি চলে আসে, কারণ সেই সময় আরবের অন্ধকার সমাজে প্রদীপের আলো হয়ে আসেন সর্ব শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ), পরের দিন আব্দুল মুত্তালিক তার নাতির আকিকার জন্য উট জবাই করে গরীব দুঃখী মানুষদের খাওয়ান, সেখানে তাকে সাহায্য করছিল তার ছেলে আবু তালিব, তখন সেখানে আবু তালিবের বড় ভাই অর্থাৎ নবীজির আরেক চাচা আবু লাহাব আসেন, গরিবদের সাথে একসাথে বসে খেতে হবে দেখে বাড়ির দরজা থেকেই তিনি চলে যান।
আসলে আবুলাহাব অনেক অহংকারী লোক ছিলেন অন্যদিকে মা আমিনার বুকের দুধ তৈরি হচ্ছিলো না তাই শিশু মহম্মদকে দুধ খাওয়ানোর জন্য একজন মহিলাকে ডাকা হয় ছিল আবুল আহাবের স্ত্রীর দাসী তাই আবু লাহাব ঘরে ফেরার পর তার স্ত্রী তার সাথে অনেক রাগারাগি করে যে তার দাসীকে এই কাজের জন্য কেন নেওয়া হলো আসলে আবুল আহবের স্ত্রীও অনেক অহংকারই ছিল।
অন্যদিকে দেখা যায় ইহুদিরা মিলে কথা বলছিলো তারা বুঝতে পেরেছে কোন বিশেষ শিশুর জন্ম হয়েছে, কারণ এ ব্যাপারে তাদের kitab এও স্পষ্ট বলা ছিল, ফলে যেদিন রাতে নবীজির জন্ম হয় সেদিন রাতের আকাশের সেই আলো দেখেই খ্রিস্টান এবং ইহুদিদের ধর্মযাজকরা বুঝে গিয়েছিল, তার মানে সেই শিশু পৃথিবীতে চলে এসেছে তবে ইহুদীরা বেশ চিন্তিত ছিল, কারণ তারা জানতে পেরেছিল যে কোন ইহুদীর ঘরে এমন শিশুর জন্ম নেয়নি।
তাহলে সেই শিশুটি কে হতে পারে. আর এজন্য তারা তখন সেখানকার অনেক বাচ্চাকে কিনতে চায়, যেন সেই শিশুটি তাদের দলে আসে, এমনকি টাকার বিনিময়ে ভন্ড মহিলাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়, শরীরের কোন বিশেষ দাগের মাধ্যমে শিশু নবীজিকে খুঁজে বের করার জন্য. এরপর দেখা যায় বাচ্চাদের নাম রাখার উৎসব চলছে।
সেখানে বিভিন্ন বাচ্চাদের নাম ঘোষণা করা হচ্ছে আর সবাই মিলে আনন্দ করছে, এর মধ্যে সেখানে আব্দুল মুত্তালিব আসেন শিশু নবীজিকে কোলে নিয়ে তার নামকরণ করার জন্য, তিনি প্রথমে হাজরে আসওয়াত মানে সেই কালো পাথরে হাত রাখেন, তখনই দেখা যায় কাবার দরজার হাতলটি দরজায় বারি মারছিল. আর সেই শিশুর শরীর থেকে নুরের আলো বের হচ্ছিল আব্দুল মুত্তালিব তখন সবার সামনে জনসম্মুখে শিশুটির নাম ঘোষণা করে (মোহাম্মদ) এটা শুনে সেখানে থাকা বিভিন্ন গোত্রের মানুষেরা বলাবলি করতে থাকে যে এটা আবার কি নাম? এটি তো আমাদের কোনো দেবদেবীর নামের সাথে মিলে না নামটিকেও আগে কোনদিন শুনেনি।
তাই মানুষজন এটা নিয়ে কথা বলাবলি করছিল, তখন সেখানে আবু তালিব সবার সামনে এসে বলে হে লোক সকল তোমরা থামো, এই শিশুটির নামকরণ করা হয়ে গিয়েছে, আর তোমরা তা পরিবর্তন করতে পারবে না, এবং এই বলে তিনি সবাইকে থামিয়ে দেন এবং সবাই তা স্বাচ্ছন্দ্যে মেনে নেন, এরপর দেখা যায় আবু লাহাব তার স্ত্রী সেই দাসীকে ফেরত নিতে এসেছে, যে নবীজিকে প্রথমবার দুধ পান করিয়েছিল।
ফলে ক্ষুধার্ত নবীজি আর দুধ পান করতে পারছে না এ নিয়ে আব্দুল মোত্তালিব সরাসরি আবুল লাহাবের কাছে আসে এবং এর কারণ জানতে চায়, আবুলাহাব তখন বলে ওই দাসীকে আমি আমার স্ত্রীকে উপহার দিয়েছিলাম, তাই তার মালিক হলেন আমার স্ত্রী, এটা শুনে আব্দুল মুত্তালিব বলেন তুমি মোহাম্মদের চাচা হয়েও একথা বলছো অথচ আমি তো সবসময় মহম্মদের জন্য নিজের জান দিতে প্রস্তুত।
তবে আল্লাহ তো মেহেরবান. তাই মোহাম্মদকে বেশিদিন দুগ্ধকষ্টে থাকতে হয়নি. কারণ সে সময় আরবের রীতি ছিল যে, সন্তান জন্ম নেওয়ার পর তার দুধ পান করানোর জন্য এবং মরুভূমি থেকে দূরের মুক্ত আবহাওয়ায় লালন পালনের জন্য বেদুইন মহিলাদের কাছে দিয়ে দেওয়া এবং নির্দিষ্ট সময় পর আবার ফেরত নেওয়া এর আরেকটি কারণ ছিল বাচ্চাদের বিশুদ্ধ আরবি শেখানো আর সব কিছুর জন্যই সেই বেদুইন মহিলাদের ভালো অঙ্কের অর্থ দেওয়া হতো।
তো প্রতি বছরে একবার সেই বেদুইন মহিলারা মক্কায় আসতো বাচ্চা দত্তক নিতে. এবারও অনেক দম্পতি এসেছে এখানে. এর মধ্যে একটি দম্পতিকে দেখা যায় যারা নিজেরাও বেশ ক্লান্ত. তাদের খুব নাজেহাল অবস্থা মরুভূমির উত্তপ্ত গরমের মধ্য দিয়ে অনেক দূর পথ পাড়ি দিয়ে এখানে আসতে হয়েছে তাদের, তাই প্রথমেই তারা তাদের উটটাকে খুব কম দামে বাধ্য হয়েই বিক্রি করে দেয় এবং বাচ্চা খুঁজতে থাকে তারা আসতে দেরি করায় ততক্ষনে প্রায় সব বাচ্চাই দত্তক নিয়ে ফেলেছে অন্যরা এটা দেখে তাদের মন কিছুটা খারাপ হয়ে যায়।
এদিকে কসাই যখন তাদের উটটাকে জবাই করতে যাবে ঠিক তখনই উঠটি উঠে দৌড় দেয় এবং নবীজির বাড়িতে প্রবেশ করে, এটা দেখে ওই লোকটির স্ত্রী ও উটের পিছনে পিছনে প্রবেশ করে তখন নবীজির মা আমিনা মহিলাটিকে খুব ক্লান্ত এবং ক্ষুধার্ত দেখে খাওয়নোর জন্য তাকে ঘরে নিয়ে যায়, আর তার পিঠের বাচ্চাটিকে দোলনায় শুয়ে দিতে বলেন. মহিলাটি যখন তার বাচ্চাকে দোলনায় রাখতে যান তখন তিনি শিশু মহম্মদকে দেখতে পান।
যার শরীর থেকে নুরের আলো চমকাচ্ছিল সেই মহিলা তখন নবীজিকে কোলে তুলে নেন এবং তাকে ক্ষুধার্ত দেখে নিজের দুধ পান করান আর এই মহিলাই হলেন নবীজির দূত মা হালিমা. আসলে নবীজিকে লালন পালনের জন্য বেশি টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই বলে নবীজিকে তখনও কেউ দত্তক নেয় নি নবীজীর দাদা এবং মা আমিনা হালিমা এবং তার স্বামীর সাথে কথা বলেন এ ব্যাপারে।
এটা শুনে হালিমা এবং তার স্বামীও রাজি হয়ে যায়, যদিও তারা জানতো যে এক্ষেত্রে তারা খুব ভালো অর্থ পাবে না, এরপর দেখা যায় মা আমিনা নিজে অনেক কষ্ট পেলেও নবীজিকে হালিমার কাছে দিয়ে দেন, এবং তাদেরকে আরও দুটি উট ও একটি গাধাও দেওয়া হয়েছিল, হালিমা যখন নবীজিকে নিয়ে তার এলাকায় প্রবেশ করে তখন সেখানে বৃষ্টি হতে শুরু করেছে।
অথচ আগেই এখানে খুব একটা বৃষ্টি হতো না, পাশাপাশি নবীজি আসার পর থেকেই দুধ মা হালিমার ঘর যেন আল্লার রহমতে ভরে উঠেছে, আর এভাবেই কেটে যায় দুই বছর, এবং চুক্তি শেষ হওয়ার কারণে দুধ মা হালিমা এবং তার স্বামী মিলে নবীজিকে মা আমিনার কাছে ফেরত দেওয়ার জন্য নিয়ে আসে নবীজি আসার সাথে সাথেই কাবাঘর পুরো জ্বলজ্বল করে আলো ছড়াচ্ছিল, অন্যদিকে মা আমিনাও নবীজিকে দেখে খুশিতে কেঁদে ফেলে, কিন্তু কাবার আশেপাশে তখন একটা মহামারী রোগ ছড়িয়ে পড়েছিল।
সেই সাথে নবীজীর দাদা আব্দুল মুত্তালিব জানতে পারেন যে ইহুদীরা তখনও নবীজিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে, খারাপ কিছুর আশঙ্কা থেকে নবীজিকে রক্ষা করতে আবারও নবীজিকে দুধ মা হালিমার সাথে পাঠিয়ে দেন।
এরপর কেটে যায় আরো দুই বছর। এর মধ্যে হঠাৎ একদিন নবীজীর দুধ মা হালিমা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পরে, এখানকার কবিরাজ এবং তান্ত্রিকরা এসে হালিমাকে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করছে. কিন্তু নবীজি এটা দেখে তান্ত্রিকদের সরিয়ে দিয়ে যখনই হালিমার হাতে হাত রাখে তখনই দেখা যায় দুধ মা হালিমা সুস্থ হয়ে গিয়েছে।
আর এটা দেখে তান্ত্রিকরা অবাক হয়ে যায়, এবং সেখান থেকে চলে যায় তবে তান্ত্রিকরা বুঝে গিয়েছিল যে, এই সেই বিশেষ শিশু, আর এই খবর তারা ইহুদীদের জানিয়ে দেয়, ফলে নবীজিকে নেওয়ার জন্য শত্রুরা বিভিন্নভাবে হালিমার বাড়িতে আক্রমণ করে, আর এ থেকে হালিমা এবং তার স্বামী নবীজিকে রক্ষা করলেও খারাপ কিছুর আশঙ্কা বুঝতে পেরে হালিমার স্বামী নবীজিকে নিয়ে মক্কার একটি পাহাড়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
তবে এবারের বিদায়ের দুধ মা হালিমা কান্নায় ভেঙে পড়ে, নবীজির দাদা এ খবর জানতে পেরে নবীজির কাছে চলে আসেন, আর গুহার মধ্যেই তারা দাদানাতি এক বছরেরও বেশি সময় পার করেন, নবীজির উপস্থিতিতে মরুভূমি ততদিন প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠেছিল, এরপর একদিন মা আমিনা সেই গুহা থেকে নবীজিকে নিয়ে মদিনাতে আসেন, তার আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা করতে এবং তার স্বামী মানে নবীজির বাবা আব্দুল্লার কবর দেখতে।
মূলত নবীজির জন্মের দুই মাস আগে ব্যবসার কাজে আব্দুল্লাহ মদিনায় এসেছিলেন, এবং অসুস্থতা জনিত কারণে মারা গিয়েছেন. তাই মদিনাতেই ওনার কবর দেওয়া হয়েছিল, মা আমিনা এখানে নবীজিকে তার বাবার সম্পর্কে বলতে থাকেন এবং নবীজির সাথে খুব ভালো একটা সময় কাটাতে থাকেন, কিন্তু মাত্র দুই মাসের মধ্যেই মা আমিনাও হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন, আর এই অবস্থাতেই নবীজিকে নিয়ে মদিনা থেকে ফেরার পথে মা আমিরাও মারা যায়।
ফলে মাত্র ছয় বছর বয়সেই নবীজি পুরোপুরি এতিম হয়ে পরেন, তবে এই অবস্থাতেও ইহুদিরা নবীজির উপর আক্রমণ করলে নবীজীর চাচা তাদেরকে প্রতিহত করেন, এরপর আবু তালিব নবীজিকে এবার তার দাদা আব্দুল মুত্তালিমের কাছে মক্কায় নিয়ে আসেন, আব্দুল মুত্তালিব এবং নবীজি সবসময় একসাথেই থাকতেন, এমনকি কাবার রক্ষনাবেক্ষন এবং মক্কায় হজ করতে আসা মানুষদেরকে দাদার সাথে সাথে নবীজিও সহযোগিতা করতেন।
তবে সে সময় একদিন হজ্ব মওশুমে কাবা তাওয়াফ করার সময় আব্দুল মুত্তালিক বেশ অসুস্থ হয়ে পরেন, আর এই সুযোগে নবীজির অহংকারী চাচা আবুল লাহাব চায় পুরোহিতদের নেতা হতে, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই আব্দুল মুত্তালিক নবীজিকে তার চাচা আবু তালিবের হাতে তুলে দেন, এবং মারা যান, ফলে মাত্র আট বছর বয়সেই নবীজি যেন আরও অভিভাবক শূন্য হয়ে পরেন, এরপর চাচা আবুল লাহাবের সাথে মক্কাতেই নবীজি জীবন যাপন করতে থাকেন।
সেখানে নবীজির ছাগল চরানো সহ বিভিন্ন কাজ করতেন, তবে একদিন নবীজি দেখেন যে নবীজির সেই অহংকারী চাচা আবু লাহাব নামের একজন দাসীকে অন্যের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন, কিন্তু সওয়াইবার স্বামী সেটা না করার জন্য আবুলাহাবকে অনুরোধ করতে থাকেন, কারণ সে অসুস্থ ছিল, উত্তরে আবুলাহাব বলেন আমার পাওনা অর্থ ফেরত দিয়ে দিলেই আমি তাকে আর বিক্রি করবো না, তখন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নবীজি চাচা আবুলাহাবকে বলেন যে আপনি ছেড়ে দিন।
আর আমি নিজেই আপনার অর্থ ফেরত দিবো, নবীজির এই মহানুভবতার কারণে সওয়াইবা সেদিন ছাড়া পেয়ে যায়, মূলত সওয়াইবা ছিলেন সেই মহিলা যিনি নবীজীকে সর্বপ্রথম দুধ পান করিয়েছিলেন।
এরপর আর একদিন নবীজি দেখেন যে একজন লোক তাঁর কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিতে যাচ্ছেন, লোকটির স্ত্রী তার পায়ে ধরে কান্না করে এটা না করার অনুরোধ করছেন, নবীজি তখন বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে লোকটির কাছে আসেন, এবং লোকটিকে বোঝান যে মেয়ে সন্তানরা হল পিতামাতার জন্য রহমত স্বরূপ, নব নবীজির কথা শুনে লোকটির মন মায়ায় ভরে যায় এবং তার কন্যা সন্তানকে গ্রহণ করেন।
এভাবে দেখতে দেখতে নবীজির বয়স হয় বারো বছর, তার চাচা আবু তালিব যেহেতু ব্যবসায়ী ছিলেন, তাই আরবের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছরে একবার সিরিয়ায় সফরে যেতেন, তবে নবীজিও এবার বায়না ধরলেন তিনিও তার চাচার সাথে সিরিয়ায় সফরে যাবেন, যাত্রা শুরু করার পর প্রতিমধ্যে বশরা নামের একটি জায়গায় তারা তাবু ফেলেন, আর সেই শহরে একটি গির্জায় বুহাইরা নামের একজন ইহুদী পাদ্রী ছিলেন, যিনি নবীজি এবং তার চাচার কাফেলার মুসাফিরদের দাওয়াত খাওয়ান।
তিনি বালক মোহাম্মদকে দেখে বুঝতে পারেন যে তিনিই হলেন শেষ নবী, এটা যেমন তাদের কিতাবে লেখা ছিল তেমনি তার অন্তর দৃষ্টি দিয়েও বুঝতে পেরেছিলেন, এরপর তিনি আবু তালিবকে বলেন যে মোহাম্মদ এখন তোমার আশ্রয় আছে তোমার আরো বেশি সতর্ক হওয়া উচিত, এবং এটাও বলেন যে মোহাম্মদকে নিয়ে তোমার সিরিয়ায় যাওয়া উচিত হবে না, কারণ সেখানকার ইহুদীরা তার ক্ষতি করতে পারে, তাই আবু তালিব তাঁর সিরিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত বদলে আবার মক্কার দিকে ফিরে আসতে শুরু করে।
তবে পথমধ্যেই তারা সেই ইহুদীকে আহত অবস্থায় দেখতে পায় যে কিনা বারবার মোহাম্মদের ক্ষতি করতে চেয়েছিল, নবীজি তখন তার ঘোড়া থেকে নেমে সেই ইহুদির মুখে পানি তুলে দেয়, আর তাকে সমুদ্রের পাশে একটি জায়গায় নিয়ে আসেন সেখানে নবীজি দেখতে পান যে একটি মূর্তির সাথে শিকল দিয়ে একজন মহিলা ও দুটি বাচ্চাকে বেঁধে রাখা হয়েছে কোরবানি দেওয়ার জন্য, আর অন্যদিকে সেখানকার জেলে সম্প্রদায়রা পূজা করছে যেন তাদের দেবতা, তাদের কোরবানি গ্রহণ করেন।
এবং ছেলেদেরকে প্রচুর ধনসম্পদ দান করেন এটা দেখে সেই মহিলা এবং তার বাচ্চাদের শিকল খুলে দিতে লাগলে পূজারী ছেলেরা মোহাম্মদকে থামাতে যায়, আর ঠিক তখনই সমুদ্রের ঢেউ এমন ভাবে উঠে যে সেই মূর্তিটি ভেঙে পড়ে, এবং পুজারীরা সব ঘরের ভিতরে চলে যায় কিছুক্ষণ পর ঢেউ থামার পর দেখা যায়, প্রচুর মাছ সমুদ্রের পারে এসে জমা হয়েছে যা দেখে জেলেরা অবাক হয়ে যায় এবং দ্রুত সেই মাছ কুড়াতে থাকে।
আর দূর থেকেই সব দেখে সেই ইহুদী লোকটিও অবাক হয়ে যাই আসলে আল্লাহ পাকের কাছে এটা নবীজির প্রার্থনা ছিল, শেষ দৃশ্যে দেখা যায় আবু তালেব বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছে, আর তিনি কাবার সামনে দাঁড়িয়ে মক্কার সবাইকে আহ্বান করছে কোনোরকম দ্বন্দ্ব বিবাদ ছাড়া পথে ফিরে আসতে এবং শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে।
কিন্তু তখনও সেখানকার কিছু নেতারা আবু তালিব এবং মোহাম্মদকে মিথ্যা প্রমান করতে চায়. তবে মক্কার মানুষ ততদিনে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিলেন মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন সর্বশেষ নবী তার ধর্মই সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম।
প্রিয় দর্শক আজকের এই তথ্যমূলক সিনেমাটির ভিডিওটি এই পর্যন্ত। আল্লাহ হাফেজ
মোঃ আহসান হাবিব